মোঃ আবুল কালাম আজাদ চান্দিনা (কুমিল্লা):
কুমিল্লার চান্দিনার মাধাইয়া-রহিমানগর সড়ক। চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার রহিমানগর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কটি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাস স্টেশন এসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে। যে কারণে ওই সড়কটি দুই জেলার সংযোগ সড়ক হিসেবে চিহ্নিত। আবার চান্দিনা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগের অন্যতম সড়ক এটি। আঞ্চলিক সড়কগুলোর মধ্যে ওই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্ববহন করে।
দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ সড়কটি সংস্কার না করায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কের বড় গর্তগুলোতে পানি জমে পুকুরে পরিণত হয়েছে। যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন উল্টে প্রতিদিনই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে যাত্রীরা সিএনজি অটোরিক্সা, ইজিবাইক থেকে নেমে নিজেরাই ঠেলে পার করছে যানবাহন! বন্ধ হয়ে গেছে চান্দিনার নবাবপুর থেকে ঢাকা রুটে চলাচলরত যাত্রীবাহী বাসও।
২৫ কিলোমিটারের ওই সড়কটির ২০.৫ কিলোমিটারই চান্দিনা অংশে। যারমধ্যে মাধাইয়া বাস স্টেশন থেকে রাণীচরা পর্যন্ত ৯.৬ কিলোমিটার অংশই ভাঙ্গা ও খানাখন্দে ভরা। ওই সড়কের রসুলপুর বাজার ও সিঙ্গাড্ডা এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে সৃষ্ট গর্তগুলো দিনে দিনে বড় হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে ওই গর্তগুলোতে পানি জমে থাকায় গর্তের গভীরতাও আন্দাজ করতে পারছে চালকরা। যে কারণে ওই গর্তগুলোতে প্রতিদিনই যানবাহন আটকে যাচ্ছে আবার উল্টেও পড়ছে। প্রায়ই আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। বেহাল সড়কটিতে বেড়েছে পরিবহন ভাড়াও। সড়কটির এমন দুরবস্থায় চালক, যাত্রী ও স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভে সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়- স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ওই সড়কটিতে সর্বশেষ সংস্কার কাজ করা হয়। সংস্কারের এক বছর গত না হতেই সড়কটিতে বাস, ট্রাক সহ বিভিন্ন ভারী যানবাহন চলাচল করায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। কয়েক বছর জোরাতালি দিয়ে চললেও বর্তমানে সেই অবস্থাটুকু নেই।
৫.৫ মিটার প্রস্থের সাড়ে ৯ কিলোমিটার ওই সড়কটির অধিকাংশ অংশে কার্পেটিং উঠে গেছে বহু আগে। চান্দিনা উপজেলার জামিরাপাড়া, ছেঙ্গাছিয়া, মহিচাইল, রসুলপুর, সিঙ্গাড্ডা এলাকায় মেকাডাম উঠে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও পাকার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। পাকা সড়কে মাটি দিয়ে ভরাট করাও হয়েছে বেশ কিছু স্থানে। সম্প্রতি গর্তগুলোতে ট্রাক উল্টে মহিচাইল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গারও ঘটনা ঘটে। চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা ভারী বর্ষণে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।
ওই সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, চাকুরী ও পেশাজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। ৪০ টাকার ভাড়া দিনের বেলা ৬০ টাকা এবং সন্ধ্যার পর ১শ টাকা নিচ্ছে সিএনজি অটো রিক্সার চালকরা।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়- ২০২৪ সালের শেষ দিকে ‘চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ এর আওতায় মাধাইয়া বাস স্টেশন থেকে রাণীচড়া পর্যন্ত ৯.৬ কিলোমিটার বেহাল সড়টি সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেই মোতাবেক ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রাক্কলন ব্যয় তৈরি করে অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। চলতি বছরের জুন মাসে দরপত্র আহবানও করা হয়। কিন্তু উপযুক্ত দরপত্রদাতা না পাওয়ায় ১১ আগস্ট আবারও পুনঃদরপত্র আহবান করা হয়।
স্থানীয়রা জানান- দীর্ঘদিন যাবৎ সড়ক সংস্কার না করায় জনদুর্ভোগ চরম আকারে ধারণ করেছে। সড়কের মাঝে বড়বড় গর্তগুলোতে মাছ ফেলে, জাল দিয়ে মাছ ধরে প্রতিবাদ করেছে। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু কোন কিছুই যেন কাজে আসছে না।
ওই সড়কে চলাচলরত অধ্যাপক মো. মাসুমুর রহমান জানান- আমি প্রতিদিন চান্দিনা থেকে লক্ষীপুর আলীম মাদ্রাসায় যাতায়াত করি। সড়কের যে অবস্থা চালকরা বাড়তি ভাড়া নেয়ার চেয়ে বড় কথা হলো তারা যে ওই সড়ক দিয়ে যেতে রাজি হয় এটাই বড় কথা। প্রায়ই আমাদের বহনকারী সিএনজি অটোরিক্সা বিকল হয়ে পড়ে। আগে এক ঘন্টায় চান্দিনা থেকে আমার মাদ্রাসায় যাওয়া সম্ভব হতো এখন দেড় ঘন্টাও যাওয়া সম্ভব হয় না।
আকিজ কোম্পানী লিঃ এর পণ্যবাহী গাড়ি চালক জসিম উদ্দিন জানান- এই সড়কটি দেখলে মনে হয় দেখার কেউ নেই। আমি অনেক কষ্ট করে ৭-৮ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়েছি। বড় গর্তগুলো দেখলেই ভয় পাই, মালামাল নিয়ে গাড়িটি উল্টে যায় কিনা? তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- রাজনৈতিক নেতারা শুধু নির্বাচন নিয়ে ভাবে, জনগণের কষ্ট নিয়ে কেউ ভাবে না।
রসুলপুর বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল হাসান বলেন- আমরা এখানে ব্যবসা করি। প্রতিদিনই দোকানের সামনের সড়কের গর্তগুলোতে ২/৪ টি অটো-সিএনজি উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। আমরা দোকান ফেলে তাদেরকে টেনে উঠাই। আবার উল্টে যাওয়া গাড়িগুলোও ঠেলে উঠাই। এমন পরিস্থিতিতে কেউ এসে এক মুঠ কংক্রিটও ফেলছে না।
কৃষক রহমান মিয়া জানান- সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের কৃষি পণ্য পরিবহনে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। উৎপাদিত ফসল নিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে যেতে এই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি ভাঙা হওয়ায় কৃষিজাত ফসল পরিবহণের খরচও অনেক বেড়ে গিয়েছে।
যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম জানান- আমি পরিবার নিয়ে নবাবপুর থেকে মাধাইয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে কয়েকটি স্থানে সিএনজি অটোরিক্সা থেকে নেমে অটোরিক্সা ঠেলে অতিক্রম করেছি। ৪০ টাকার ভাড়া দিচ্ছি ৬০ টাকা উল্টো অটোরিক্সাকে ঠেলে ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে!
এব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান- গত বছর এবং এ বছরের ভারী বর্ষায় সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। আমরা ২০২৪ সালের বর্ষা মৌসুম শেষে মাধাইয়া থেকে ৯.৬ কিলোমিটার সড়ক পরিদর্শন করে প্রাক্কলন ব্যয় তৈরী করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠিয়েছিলাম। চলতি বছরের ১৭ জুন দরপত্র খোলা হলেও উপযুক্ত দরদাতা না পাওয়ায় ১১ আগস্ট আবারও দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে অক্টোবর মাসের শেষ দিকে কাজ শুরু হবে। অপরদিকে, গত একমাস টানা বর্ষণের ফলে সড়কটি প্রাথমিক সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। খুব শীঘ্রই আমরা স্থানীয়ভাবে বড় গর্তগুলো ভরাট করার চেষ্টা করবো।
[contact-form][contact-field label="Name" type="name" required="true" /][contact-field label="Email" type="email" required="true" /][contact-field label="Website" type="url" /][contact-field label="Message" type="textarea" /][/contact-form]
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ আবুল কালাম আজাদ, বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: ০১৮২৯০৭৩০৬৬, ০১৭১৮১৬৫৯০৩
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত